মেঘেদের শূন্যস্থানঃ অভিজিৎ মিত্র

পাঠকামি - ১৬

অভিযানেই পরিচয়, অভিজতের সাথে, কথা শুরু হয়, কথা এখনো চলছে, তার কথাবার্তা থেকে বোঝা যায় সে একজন সিরিয়াস ধরনের কিছু কথা বলতে চায়, তার শিল্পবোধের ভাষা কবিতার খাতায় জমে মেঘ হয়, বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে, শূন্য হয়ে যায় আবার । কবি রিসাইকেলে ফেলে চাষ করে তোলেন সোনার ফসল, আবার কবিতার বীজ তৈরী হয় ।

মেঘেদের শূন্যস্থানঃ অভিজিৎ মিত্র


বইটি আমি অভিযান পাবলিশার্স থেকেই সংগ্রহ করি, পরে ওরা সাথে আমার দিল্লির বইমেলায় দেখা হয়, অনেক আড্ডা দেবো বলে কথা দিয়েও আড্ডা দেওয়া হয়নি । ওর নিজের কন্ঠে কবিতা পাঠ শোনার ইচ্ছে রয়ে গেলো ।  এই জানজটময় দিল্লির ইঁদুর দৌড়ের মাঝে  এই বইটি নিয়ে বসেছি আজ । একটা কবিতা পড়া যাক ।

"জন্ম নিয়ে ভাবি না, জন্মেছি বহুবার
মৃত্যুর অপেক্ষায় হাঁটু মুড়ে বসে আছি
যে কোনদিন জন্মের কাছে ফিরে যাবো "

কবিতায় সটান কেন্দ্রে পৌছে আস্তে আস্তে পরিধির দিকে ছড়িয়ে যাওয়ার একটা প্রবনতা দেখা যায় আজকের দিনের মানুষের । যে কোন বক্তব্যের আগে কোন কারন জানাবার দরকার থাকেনা, বরং সিদ্ধান্ত চলে আসে এই ঝটকায় । বাকিগুলো উহ্য থাকে । এটা গুগল কালচার বলুন বা বিজ্ঞান মনস্কতা । শিল্পের জিস্টটুকু এক গৌরচন্দ্রিকায় ধরার প্রচেষ্টা বহুযুগের কিন্তু এই ইন্টারনেট যুগে তা অজস্র ইফ এলস পার করে এসে মুখবন্ধে পৌঁছায় ।

মেঘেদের শূন্যস্থানে কাকে বসাবে কবি ? ছন্দ না ধ্বনি না ভাষা নাকি বিষয় ? যে কোন সিন্ট্যাক্সে শিল্পবোধ কে ধরা যায় না, তার জন্য গ্রহনযোগ্য এক ডেসিবেল আছে, অভিজিতের এই যুগের ভাবনায়  ওর জীবন দর্শন, আধুনিক যাপনের অভিজ্ঞতা, এ তার নিজের নজরে কবিতাকে ধরা । কবিতাকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তরুণ কবিরা ।

অনেক কবিতার কথা বলা যায়, যা এক নজরে ভালো লেগে যায় ।  মেঘের বিয়ে , পরিচয়, টিকিট, ম্যাজিক । একটা লেখা আছে শক্তি,  তাতে লেখকের শক্তিশালী লেখনীর পরিচয় রাখে ।

এই সময়ের অনেক কথা এখন নয়েজ, মানে যেখানে অনেক ভীড়, কোন কবিতা থেকে তার ধ্বনিটুকু তুলে আনা আবেগ সাপেক্ষ, যেটুকু নির্যাস পড়ে থাকে কালের সমসাময়িকতা । তরুন প্রজন্মের কবিতায় যে টানাপোড়েন আমাদের মত সাধারণ পাঠককে ঝাঁকিয়ে যায়, অভিজিৎদের জীবন দর্শন । তাকে শিল্প করে তুলতে যে ভাষার প্রয়োজন, তাকে বোঝার জন্য যে বোধের দরকার, একটা ছাদ লাগে আমাদের । বন্ধুত্ব আমাদের দেই সামগ্রিক অবসর দেয়, একটা ছাদের নীচে নিয়ে আসে, আমরা কাছে আসি, এক ভাষায় কথা বলি, বুঝি এক এলাকার বাসিন্দা আমরা, ভীড়ের ভিতর থেকে সেই ডাক আমি শুনতে পাই । অভিজিত সেই কবিতার ডাক লেখে । শূন্যস্থান পুরন করার প্রয়োজনে কবিতা লিখতে নিশ্চয় তার আসা নয়, নিজের অবস্থানকে পুনঃআবিষ্কারের নেশায় - ওর একটি কবিতার লাইনে

"আসলে সারা জীবন একটাই কবিতা লিখেছি / তোমরা নিজদের মতো মানে খুঁজে নিয়েছো । "




No comments:

Post a Comment