মন্দ মেয়ের সেলফিঃপৃথা রায় চৌধুরী

পাঠকামি - ১২

তার সাথে বেশী আলাপ নেই, হঠাৎ বইমেলায় দেখা । এর আগে বেশ কয়েকবার তার কবিতা পড়েছি মাত্র, হাতে যখন তার একখানি বই চলে এলো, পাঠ করে তার একটা মতামত তো দিতেই হয় । বলা যায় আমার ব্যস্ততার কারণেই অনেক এইরকম বই যা আমি পড়তে চাই, পড়া হয়ে ওঠে না ।

মন্দ মেয়ের সেলফিঃপৃথা রায় চৌধুরী
বইটির প্যাকেজিং একেবারে আলাদা, যেটা জারা হাটকে ক্যাটেগরীর, যেটা আমি বহুদিন ধরে বলে আসছি যে কবিতা বা যে কোন শিল্পের এই অজানা এক্স ফ্যাক্টরের কথা । যে কোন ধাববান গতির বস্তু তার অভিমুখে ছুটবেই কিন্তু তার একটা প্রাথমিক ধাক্কা তো লাগবেই । কবিতার বই এমনিতে কম বিক্রি হয়, তাই আমি এই রকম প্যাকেজিং পছন্দ করি । এই বারে এটা খায় বা মাথায় দেয় সেটা উহ্য রাখাই ভালো, বরং একটা কবিতা পড়ে নিই ।

"কোনদিন হিমঘরে দেখে যাবে
তোমাকে শেষ ছুঁতে চাওয়ার নাম আঙ্গুল
চোখ, তোমাকে শেষবার দেখার ইচ্ছা"
-কবিতা "মেঘে ঢাকা তারা" । এরকম একটা ভাষার প্রয়োগে একঘেয়েমী কেটে যায়, কবিতাতে জান আসে, বাঁচতে চেয়ে ফিরে আসে লাশ কাঁটা ঘর থেকে আট বছর আগের একদিন । কবিতা তো প্রায়ই পড়ি, ওয়েবজিন, ফেসবুক, দেশ ও বিদেশের পত্রিকায়, এই রকম ছাপ লেগে থাকা খুব অ-সময়ের ভালো কাজ যেটা চাঁদ ফুল জোছনা ছাড়াও অন্য ডাইমেনশন খুঁজে চলার অপার চিত্রকল্প ।

"মেঘ জমতেই পারে, অথচ বরফ খুঁজে পাবো, এমন গন্ধের আভাষ ছিলো না তো, তোমার নিরানব্বইতম চিঠির হলদেটে রাতপোষাকে;"
- কবিতা "নিশ্চিহ্ন"
এবার অবাক করে দেবার পালা, অনিশ্চয়তার ঘনত্বে অপার দিগন্ত খুলে যায় সম্ভবনার , কবির দেখার মধ্যে লুকিয়ে থাকে যে সব জীবন যাপনের অভিজ্ঞতা, জন্মের পাওয়া না পাওয়া , লিখে যাওয়া শব্দের মধ্যে সেই সৃষ্টি অমরতা চায়, কবিতা হয়ে ওঠে মর্মস্পর্শী । যে কথাটা বার বার মনে হচ্ছে, প্রত্যেক কবিতার সাথে তার একটা ইলাস্ট্রেশন কবিতার যোগাযোগ বাড়িয়ে চলেছে, পাঠকের মনে একটা এক্সট্রা মাইলের অনুভূতি নিয়ে আসে ।

"শোধের নাম ছুঁড়ে দেওয়া
রক্তকরবী ফুটে ওঠে
নয়া রিং টোন, শাসন
থই থই সমুদ্দুর"
-কবিতা "বৃষ্টি শেষে"
কবিতা গুলির মধ্যে যদি কোন যাদুবাস্তবতা খোঁজ নিরাশ হবে বরং কিছু রোমান্টিকতার ছোঁয়া পাওয়া যাবে । কবিতায় নারী সত্তার প্রেমিক রুপ বার বার চিত্রিত হয়ে ওঠে ; সেটাই স্বাভাবিক । কবির চোখে দেখা প্রেমের মেয়েলি ছোঁয়ার নিজস্বী অজান্তেই কবিতার রুপ নিয়ে নেয় ।

"তুমি ছুটে আসো আমার কাছে, বলি এসো
এদিকে নিজের জায়গার সন্ধানে তখনো চেয়ে থাকি অসমপূর্ণ "
-কবিতা "উদ্বাস্তু" ,  সমাজ দর্পন থেকে এগিয়ে গেছে অনেক কবিতা । কেউ আর জ্ঞানচক্ষু খোলার কথা ভাবে না, বরং  আবিষ্কারের কথা দুবার ভেবে দেখে, নির্জনে একবার নিজেকে বিবস্ত্র দেখতে চায়, এর মধ্যে কিছু অবৈধ্য দেখি না ।  এই বইয়ের অনেক কবিতার কথা বলা যায় যা এক আধুনিক কবির নারী যাপনের কথা যা অন্যান্য প্রতিবাদী সত্তা থেকে আলাদা । নারী যেখানে শিল্পী ও সত্যতার খোঁজে জীবনকে দাও লাগিয়ে দেয় । রাত্রির একাকী যাপন, গংগার বহমানতা,  বিরাগী দুপুরের কন্ঠস্বর, গোপন শাসনের পরোয়ানা কবিতাগুলো বৈচিত্র এনে দিয়েছে । আরো কিছু ভালো লাগা কবিতার মধ্যে  "ঘোর", "অ-গন্তব্য", "তেমনটাই", "মন্দবাসাবাসি" এই একুশ শতকের মন্দ মেয়ের ভালোবাসার গোপন কথা অন্তহীন প্রেমের নাগাল থেকে উড়াল দিয়েছে ।

"জলাভূমিতে আলেয়া আঁকতে শিখে নিয়ে নিও ততোদিনে
আইসক্রিম মাখা মুখ তোমার রুমালে মুছে যাবো গো, চিত্রকর "
-কবিতা "উড়ে" , মন্দ মেয়ের কথা বারবার প্রমানিত করে এই আগুন মাখা মেয়ে, যার সেলফিতে প্রতিটা পিক্সেলে এক একটা মেগা চিত্রকল্প দাঁড়িয়ে আছে ।  যা সেলফোনে জমে আছে অজস্র প্রেম কথা, যার সম্ভাব্য নাম কবিতা । কবিতা হতে গিয়ে জরুরী এ নয় তা নান্দনীয় হবে আর জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে ম্যাজিক নিয়ে আসবে, বরং কিছু উত্তাপের কথা নিয়ে আগুন আনুক এই মেয়ের টাচ-স্ক্রীন ।  ক্লাউড মানে সব সময় মেঘ নয় । মেয়ে আগুন আনুক, মেয়ে বৃষ্টি আনুক ।  এই অ্যান্ড্রয়েডের যুগে ভার্চুয়ালি কিছুদিন বেঁচে নেওয়া যাক তার আঁচে ।

No comments:

Post a Comment