মৃত্তিকা ঋন মেঘমিতাকেঃ অপাংশু দেবনাথ

পাঠকামি-১১

চেনা লেখকদের লেখা চমৎকার হবে , এতে তত বিস্ময় বোধ জাগে না, কিন্তু চমকে যেতে হয় তরঙ্গ মিলে যাবার কারনে, অপরিচিত কবিকে কে চেনা মনে হয় আর কাছের মানুষরা নিজের কবিদের লেখায় রস পান না । ভালোলাগার কথা আলাদা, আবিষ্কারের আনন্দ আলাদা, অনুরণনের অনুভুতি আলাদা । এমনই একটি পত্রকাব্য পড়ে এরকম অনুভূতি হল, কত কবিই তো দেশে কারা এই জমির কথা লেখে, বীজের কথা লেখে, ব্যকরণ মেনে এই সব লেখা কিনা বা জ্ঞানী লোকেরা কি বলবেন, কবিতার সাথে জড়িয়ে থাকা ভাললাগাকে ওরা বোধহয় প্রাধান্য দেয় না । অপাংশু দেবনাথ তেমনই কবিতা উপস্থাপন করেছেন 'মৃত্তিকা ঋন মেঘমিতাকে' । সুখপাঠ্য এই বইটি হাতে নিলাম আজ ;

মৃত্তিকা ঋন মেঘমিতাকেঃ অপাংশু দেবনাথ
বইটি সম্পর্কে আমার কোন এক্সপেক্টেশন নেই । শুধু একটা না জানা রহস্যের মধ্যে এক ঝাপ মারা । কবিতা পড়তে গিয়ে বেশকিছু প্যারামিটার আবিষ্কার করেছি ইতিমধ্যেই । সেগুলো গোপন থাক । কবিতাটায় মন দিই ; কবি অনায়াসে লিখে দেন

"অসুন্দর  / অবয়বে আজও অবোধ্য তা আমার কাছে । / ভোর-বিজন কিংবা কোলাহলে হয়ে উঠো / অভ্যাস। / এই অভ্যাসের বার্তা বহন করে আমাদের কেরিকাটা পথ জাতীয় সড়কে মেশে ।"  এই উচ্চারনের মধ্যে একটা টেক্সট ল্যাঙ্গুয়েজ মানে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বেরিয়ে আসে । প্রতিদিন চলতে থাকা জীবনের নির্যাস বয়ে নিয়ে আস কবির এই অভিজ্ঞতা । এর ভাষা , রচনা শৈলী নাড়া দিয়ে বাংলা পাঠক সত্তাকে । ত্রিপুরার বাংলা সাহিত্যে এটা আটকে থাকে না, বেরিয়ে পড়ে বিশ্বভ্রমনে ।

" ও তার দ্বান্দিক ধ্বনি, অথচ আমি তো সেই উত্তাপহীন, নির্মেদ পথে হেঁটে যেতে চাই / নির্মান হাওয়া হায়ে মেখে " এক অপূর্ব কাব্য আনালাইসিস । নিজেকে কতটা চিনলে কবি এই যাপনের চরম সত্যকে দাঁড় করিয়ে দিতে পারেন এক নিমেষে । দুঃখ জ্বরা ব্যধিতে সে ব্যথিত নয় সে, চরম পাওয়া তাঁকে অহংকারী করে তোলে না । তার পথ চলা নির্ভীক ।

এরকম অনেক উদাহরণ দিয়ে দেখানো যায় এই উৎকর্ষকাজ পাঠককে চুম্বকের মত টেনে ধরে, পাঠককেও কবি সঙ্গী করে নেন
"জানে দ্বিখন্ডিত/ সময় / সময়ের ধর্ম ও তার ডামাডোল । জীবনের কোন ডামাডোল ও তাহার ভাষা জানে না কৃষক, জানে কতো ঘাম ও ত্যাগের সমর্পনে, পলল হাওয়া বয় রিক্ত ক্ষেতে " আর বুঝি বিশ্লেষন করে দেওয়ার দরকার পড়ে না, কবি জীবন দর্শনের কোন স্থানে উপস্থিত হয়ে আমাদের সামনে রেখেছেন অসামান্য রচনা ।

শব্দ ব্যাবহার কিছু কিছু জায়গায় সাধু আর চলিতের মিশ্রন আছে তাতে কবির চেতনাপ্রসূত পংতি ত্বরন হারায় না । এক বেগে পড়ে ফেলতে হয় তার সমস্ত কাব্যগাঁথা কে । অপূর্ব বাক্যবন্ধন এগিয়ে নিয়ে যায় পাঠ অনুভুতি । অপাংশুকে চেনার এই সুযোগ আমি আর হারাতে চাইলাম না । ভালো থেকো বন্ধু অপাংশু । ত্রিপুরার বাংলা সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করুক এই প্রস্তুতি ।




No comments:

Post a Comment