পসিবিলিটি ও টিলিবিসিপঃ সব্যসাচী হাজরা

পাঠকামি-২

সব্যসাচীর সাথে নতুন কবিতার স্টলেই দেখা । উজ্বল, সপ্রতিভ, সটান, দীর্ঘ নাসিকা, স্পষ্ট আওয়াজ । নাম শুনলাম, মনে হলো, যথাযথ ; পরিচয় হোলো । উনি বল্লেন, ‘পসিবিলিটি ও টিলিবিসিপ পড়েছেন ?’, আমি বুঝতে পারলাম না, হাতড়াচ্ছিলাম ‘পসিবিলিটি ও......টিইইইইইইইইইসি ?’ উনি আবার বল্লেন, ‘পসিবিলিটি ও টিলিবিসিপ পড়েছেন ?’, আবার বুঝতে পারলাম না , কিন্তু ভাবখানা এমন করলাম, যেন বুঝতে পেরেছি । তাতে কারো কি ক্ষতি হোলো তা হিসেব করিনি । কিন্তু একটু বন্ধু বন্ধু ভাব হয়ে গেলো । বল্লাম আমি দিল্লি থেকে এসেছি, পেশায় সফটওয়ার ইঞ্জিনীয়ার । এবার একটা পসিবিলিটি দেখা গেলো । সব্যসাচী ও তার সহকর্মীরা একটা ওয়েব সাইট হোস্ট করেছেন, তাতে তাদের সফটওয়ার বিষয়ক সহায়তা চায় । আমার চাই কবিতা, কবিতা বিষয়ক পরিচিতি । জানতে চাইলাম বিস্তারিত প্রোজেক্ট টা কি?টিলিবিসিপ হলো । শব্দটাও পরিষ্কার হোলো । পরের দিন সবসাচী হাজরা আমাকে এই বইখানি উপহার দিলেন । বইটা খোলা যাক ।
বইঃ পসিবিলিটি ও টিলিবিসিপ – সব্যসাচী হাজরা

‘দান্তের পয়লা-বৈশাখে’
‘এক্স ও এক্সট্রা গলিপথে / তোমার ওপেনারে চা পড়ে থাক / ছাত্ররা খেয়ে যাবে ‘
এত বিদ্যা এখনো আয়ত্ব করে উঠতে পারিনি যে, বলি এটা একটা যুগোত্তীর্ন লেখা, কিন্তু এটা বোঝার মত বয়স হয়ে গেছে যে যুগ পালটে গেছে । কমে আসছে জেনারেশন গ্যাপ ।
গ্যাপ একটা আছে । পর পর বিষয়গুলিতে, স্তরে স্তরে উঠে যায় শব্দ-সিড়ি, ‘সংখ্যাগুলো নিয়ে নাপিত বসে আছে,তুরিক্কি তুর্কি তর্কায় শেষ/ দেখ কেমন লাগে ...’
‘চৌকা অথচ ভি’
এখানে একটা বিজয় মিছিল দেখতে পাচ্ছি ... পুরাতনের উপরে নতুনের বিজয় । ভি ফর ভিক্ট্রি । ‘অনাব্রেক, চৌকা অথচ ভি/ দুঃস্থ দুঃস্থ কাকলির চাপ / কত খুঁড়ে আবলুশ পাই/ দুটো দিলখুশ বালিশে ঝিমোয়’। কে কি মানে করবে জানি নাকিংবা আদৌ তার মানে করার দরকার আছে কিনা কে জানে, আমার মোটা বুদ্ধিতে এটা বুঝলাম,  দিল’খুশ’ হয়ে গেছে ।
এত দূর এসে মনে পড়ল ফেলে এসেছি বইয়ের প্রথম দিকের অনুপম মুখোপাধ্যায়ের ভুমিকা (?), কৃষ্ণেন্দু মুখার্জীর ‘শূন্যের কবি’ ও বারীনদার ‘শুভেচ্ছা’এই সব আমি বরাবরই পড়তে ভুলে যাই । অবশ্য তারিখটা দেখে নিই একবার ।
শব্দ নিয়ে খেলা , এই বেশ দেখছি নতুন কবিতার একটা অচেনা ঢেউ । খেলতে চাইছে সবাই । আর সব্যসাচীর খেলাটা খেলাকে কেন্দ্র করেই, সুনামীর নিরীক্ষা কেন্দ্র । অসাধারণ শব্দচয়ন কপিবুক ক্রিকেট ।
‘এয়তী মুসুর’
‘কস্কোর আড়ালে ফোস্কার জ্বলন্ত ঢেউ/ আমারও নোনতা থাক ফর্ষার ঘোরে /আজন্ম... আক্রান্ত...ঐ/মিঠা দুধে , ভাতে’ 
আমার একটা জিনিস মনে পড়ে যাচ্ছে , ব্যথার একটা যায়গায় আঘাত দিয়ে ‘মিঠা’ শব্দটা বড় কাঁদায় । তখন কাঁদতেই ভালো লাগে। মাকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখো ...
এ ছাড়া আরো কয়েকটই উল্লেখযোগ্য কবিতা এই বইয়ে জায়গা করে নিয়েছে । যেমন ‘আলবেরুনী বড় একা’, ‘কবিদের ক্লাস’ আমার স্বল্প জ্ঞানের জন্য তাতে মন্তব্য করে উঠতে পারলাম না । বেশকিছু নতুনত্ব দেখছি, কিন্ত মানে এই নয় সব পছন্দ হচ্ছে, আর এই অনুভূতিটা আমার একান্ত আমার

ভালো লেগেছে ‘বন্দিনীদিউ’, ‘নয়া দেবী বৈশাখে’,’৯/১২/২০’ নামকরনে সব কবিতাই অতি আধুনিক ও সময়ের দাবী অনুযায়ীসব্যসাচী যেমন বাহাতের (অনায়াসে) খেলে শব্দকে জব্দ করেছেন ডান হাতের প্রয়োগে খুশী করেছেন পিপাসিত বোদ্ধাদের, আমি এই জার্নির একটা সাক্ষী থেকে ‘পাঠকামি’তে যোগ করলাম আর একটা বই ।

No comments:

Post a Comment