কবিতা পরবাসে-২ঃ সম্পাদনা অর্ঘ্য দত্ত ।

পাঠকামি –৯

আগের বছরেই প্রথমবার দেখলাম প্রবাসী বাঙালীদের কবিতা সংকলন ‘পরবাসে’। অনেক কবিদের ভীড়, চেনা ও অচেনা । বইমেলা থেকে এক কপি সংগ্রহ করেছিলাম, পরে অবশ্য এককপি সম্পাদক বোম্বে থেকে আমাদেরকে মেল করে পাঠিয়ে দেন । বেশ কয়েকটি পাঠ-প্রতিক্রিয়া দেখেছিলাম এবং সেটা খুব ভালো লেগেছিলো । সম্পাদককে কথা দিয়েছিলাম যে এই সংকলনে সাহায্য করব, সামর্থ অনুযায়ী বিভিন্ন কবির কাছ থেকে কবিতা ও জীবনী সংগ্রহ করে দিয়েছি, আজ সেই বইটি হাতে
কবিতা পরবাসে-২ সম্পাদনা অর্ঘ্য দত্ত
বইটি হাতে নিলে হালকা মনে হয়, পাতা ওল্টালে ধীরে ধীরে তার ওজন বাড়তে থাকে । এক দুলাইন পড়তে পড়তে মনে হয় বাংলা ভাষার কত দিক আর বাংলা সাহিত্যের কত ভৌগলিক বিস্তার । অপূর্ব পরিবেশনা আর বাংলার বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কবিদের মিলনমেলা । একটা কবিতা পড়া যাক,
“হাতে পয়সা নিয়ে আমরা দৌড়ে উঠান পেরোই /ঐটুকু উঠান পেরোতে আমাদের অনন্তকাল লাগে” (কবিতাঃ “মুশকিল আসান” ) অশোক চক্রবর্তীর কবিতা আমি এই প্রথম পড়লাম, ডাইরেক্ট ইম্প্যাক্ট, এই জানজট ময় শহরে প্যাঁচানো বিবৃতির ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে সোজা কবিতা লেখা ।
মন্দিরা পালের কবিতা এর আগেও পড়েছি, ছোট স্ট্রোকে কবিতা লেখেন, জ্যামিতির কথা লিখেছেন । ঈশিতা দি দিল্লির কবি । আমার চেনা, উনি লিখছেন
“তারপর ! / দুটি শালিকের মধ্যিখানে/চিত হয়ে পড়ে থাকে/ এক ব্যতিক্রমী ফাঁক” (কবিতাঃ বিরহ ২৪ ঘন্টা) এ যেন কসমোপলিটন শহরের এক দৈনিক জীবন কথা । ভালো লাগছে কবিতাগুলি । রঞ্জন ঘোষালের ‘দোয়েলপাখিদের জন্য’ কবিতাটি ভালো লাগলো । সব্যসাচী সান্যালের ‘স্বদেশ থেকে’। এই প্রথম রোহন কুদ্দুসের কবিতা পড়লাম। ওনার গদ্যের হাত জানা ছিলো, কিন্তু কবিতাতেও যে সিদ্ধহস্ত এই বার বুঝলাম।
“পতনের আগে ছিলো কবি । পরে এক আদমখোর। সবার শেষে পিজ্জা বালক এসে দাঁড়ালো, দাঁড়িয়েই ঠাকে।“ (কবিতাঃ ফিরে এল পিজ্জা বালক )। কখন যে কি ভাবনা কবিতা কে আলোড়িত করে, মানে ঝাকিয়ে দেয় বলা মুশকিল, কবিতা দর্শন, কারেন্ট টপিক, সমাজ চেতনা, শব্দের ব্যবহার, বাক্য বিন্যাস, নতুন করে বলা, ছবি আকা...হুম, লিস্ট টা বড় হয়ে যাচ্ছে । সোনালী মিত্রের কবিতা পড়ছি ।
“আমার শরীর জড়িয়ে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন-পুরুষ/ আমাকে জড়িয়ে রয়েছে শতাব্দী-প্রাচীন পুরুষাঙ্গ ! / এসো নীলকন্ঠ পাকি, আমি শরীরের আবেদন ছড়িয়ে যাবো ...” (কবিতাঃ নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে)। এক আজানা রহস্যময়তার সাথে জড়িয়ে থাকে নারী পুরুষের নিরন্তর সম্পর্ক । একে আর অশ্লীল তকমা দেওয়া চলে না । মাঝে পড়তে পড়তে নিজের কবিতা চলে আসে, আকাশচুম্বন চ্যালেঞ্জকে বাইপাস করে পৃষ্টা উল্টিয়ে যাই। শিবেন দাসের কবিতা পড়ি। প্রবাল মুখোপাধ্যায়ের কবিতা এসে পড়ে । অরিন্দম চক্রবর্তীর একরৈখিক কবিতা, বিজয় ঘোষের রহস্যময় একটি বিড়াল এবং রাত্রির গল্প। নির্মাল্য বন্দোপাধ্যায়ের ছন্দে বাঁধা কবিতা বৈচিত্র আনে । শৌভিক দত্তের কবিতায় আধুনিকতার ছোঁয়া, পার্থ ঘোষের কবিতায় অবচেতনার কথা, সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়ের কবিতায় ছবি বড় হয়ে ওঠে।
পড়ছি অপাংশুর কবিতা। ওর সাথে আমার ফেসবুকে আলাপ আছে। মাঝে মাঝে কথা হয়। লিখেছে “ছলমের ভেতর কারা যেন ঢুকে-পুনশ্চ বাকল বদলাবে বলে” সাহসী কবি বলতে হয়, গ্রাস রুট লেভেল থেকে ওর কবিতা আর্থ-সামাজিক লেভেলে চলে আসে । গ্রাম ও সহর একাকার হয়ে যায় ।  রত্নদীপা দে ঘোষের কবিতা “ইত্যাদি” জারা হাটকে লাগল, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা “বৃষ্টিদিনের জ্যামিতি অথবা ২৬ শে জুলাই ২০০৫ ” সুপার্ব লাগলজগন্নাথ ব্যানার্জী ও শংখশুভ্র দেববর্মন বিশ্বায়ন নিয়ে এলেন আর যেটা অনেকক্ষন ধরে বলছি না সেটা হলো অর্ঘ্য দত্তের কবিতার কথা ।
“পথ শুধু চিনে রাখে/মানুষের মুখ নয় যাপনের স্বরলিপি” (কবিতাঃ পা সংক্রান্ত ) । এই খানে বস্তুত তার কাব্য দর্শনের বীজ , আমাদের সমাজ জীবনের চলাফেরা । মানুষকে কানেক্ট করার জন্য চাই মানুষের ডাক, মানুষকে মুগ্ধ করার জন্য চাই স্বরলিপি, এই কারনে বোঝা যায় তার ফেসবুকের পোস্টে কেন এত লাইক । কবিতা লেখার সাথে সাথে এই সম্পাদনার কাজটি যথেষ্ঠ ভালো করেছেন । লেখা জোগাড়ের সাথে সাথে লেখকদের সংক্ষিপ্ত জীবনী জোগাড় করাও কঠিন কাজ এই সর্বাংগসুন্দর কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য মুম্বাই বঙ্গীয় মৈত্রী সমিতিকে ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা , অভিনন্দন । দিক বিদিক থেকে লেখা এই বাংলা কবিতাগুলো এভাবে সঠিক বাংলা পাঠকের কাছে পৌঁছাক ।
      


No comments:

Post a Comment