সিগনেচার বদল


বন্ধুদের ডাকে আমি বিভিন্ন আসরে কবিতা পড়তে যাই । লোকে বলে, ওহে নতুন কবি, কি লিখছো আজকাল ? একদিন এমনই আসরে উপস্থিত আমি । বেশকিছু প্রবীন কবির সাথে কলেজের অধ্যাপিকা, ভারত সরকারের বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ উপস্থিত রয়েছেন মানে ইয়ে আর কি, তাদের কাছেও একটা দুটো করে কবিতা রইয়েছে । সেখানে আমি এই কবিতাটি শোনাইঃ


যে কবিতা লিখিনি

বসন্তের বাতাস উড়ে আসে
উড়ে উড়ে সে ভ্রমরা
দমকা দৌড়ে যায় হাইওয়ে

পাঞ্জাবী ধাবার পাশে ফেরারী ট্রাকের সাথে সাথে
সে ছুটে আসে দশ পায়ে
ওভারলোডেড ,
রিভার্স মিররের ধুলো ঝেড়ে নেয়
মুখ পালটায়ে যায়
ড্যাসবোর্ডে হুইসিল ঝুলে থাকে
বহু দিন মুখ দেয়নি কেউ

এমন গরম পিচের নরমী ধারার নাম প্রেম
আর
গলে যাবার নাম আঁতলেমি
এত পড়ছে ফিবছর
অক্ষরগুলোতে আরো বেশী
দেশী মদের গন্ধ

বাতাসে
সংকেত ধরার আর এক নাম তরঙ্গ
হর কোই
বাসন্তী রঙের নাম মহুয়া নয় ;


কবিতা কখন যে শেষ হয়ে গেল, উদাস উদাস ভাব, আসলে কোন ভাব নেই , কোন অভিব্যক্তি নেই কারো চোখে বা মুখে । মানে, তাদের উদাস উদাস চাহনী বলে দিচ্ছিলো এইসব অতি কথন তাদের একটুকুও কবিতা বলে মনে হয় নি । হয়ত এটা কবিতাই না । স্থান কাল পাত্র ভেদে যে কোন উচ্চারন কবিতা হতে পারে না । আইনস্টাইনের দুর্দশার কথা মনে হচ্ছিল ।  আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে মহাকর্ষজ তরঙ্গের কথা ভাবছিলাম একশ বছর পরে তা নতুন করে আবিষ্কারের কি দরকার ছিলো ?  মানে যে কোন কিছু হাইপোথেটিক্যাল থাকা আর প্রমান করে দেওয়ার মধ্যে কি সম্পর্ক ?  ধুর এসব কি বলছি ?  আমি বরং হারানো জমির কিছুটা পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করি ।

আমি গলাটা কেশে একটু সাফ করে নিয়ে একটু ভারী আওয়াজে বলি,

"আমার পরের কবিতা ডেডিকেট" - সবাই কান খাড়া করে আমার দিকে তীর্যক ভাবে তাকায়

ডেডিকেট

ফিল্মফেয়ার আওয়ার্ড জিতে জনৈক জনপ্রিয় অভিনেতা
বিপুল দর্শকদের সামনে দাঁড়িয়ে মাইক হাতে বললেন
" আমি এই আওয়ার্ডটি আমার মেয়ে কে ডেডিকেট করছি
কেন না আমার কাছে কন্যারা স্পেশাল "
হাতে তালি পড়ে গেল । সারা স্টেডিয়াম জুড়ে হাত তালি থামে না ।
চ্যানেলে চ্যানেলে বার বার দেখানো হলো
বার বার হাতে তালি ।

আমিও মেয়েদের সম্মান জানানো জন্য
কবি হিসাবে
কিছু অমুল্য পংক্তি তুলে কবিতা লিখলাম ।

যাদের কাছে পৌছালো , সবাই হাতে তালি দিলো

তারা হাতে তালি দিতে পারলো কারন
তারা পড়তে পারে
তাদের হাত আছে
তাদের স্কুল আছে
তাদের খাতা আছে
তাদের কলম আছে

শাল-মহুয়ার  জঙ্গল থেকে অনতি দূরে
কালীচরন  মাহাতোর ঘরে এই সব কিছু নেই
ওর হাতে কলম নেই
স্কুল নেই
টেলিভিশন নেই

তবে
তার হাতে পৌষের ফসল কাটা আছে
ধান কেটে তার শহরে পৌঁছে দেওয়া আছে

তার ঘরেও একটি কন্যা আছে
শুধু মেয়েটিকে ডেডিকেট করার মত
তার কাছে কোন আওয়ার্ড নেই ।

শেষ লাইন্টা একটু জোরে উচ্চারন করলাম । এক অদ্ভুত এফেক্ট । শেষ করতে না করতেই  হাততালি । কেউ কেউ টেবিল চাপড়ে দিলেন, কাছাকাছি যারা বসেছিলেন, পিঠ চাপড়ে দিলেন । কবিতাটি তাদের খুব ভালো লেগে গেলো ।   ডায়েরীটাকে একটা চুমু খাবার  ইচ্ছে হলো । কিন্তু বাকি কবিতাগুলি হিংসে করবে বলে ডায়েরীটি সাইড ব্যাগে চালান করে মস্ত বড় একটা ঢেকুর তুললাম । ততক্ষনে চা সমোসা চলে এসেছে টেবিলে ।


  

No comments:

Post a Comment