পাঠকামি-৮
ভাবছিলাম এবার ঘুরে দাঁড়াবো, বড্ড চক্কর আর বাকরীর ঝামেলা ।
এমন একটি ভাবনা থেকে যখন একুল ওকুল করছি । অফিস স্পেস বড় না সাদা কাগজের অভিমান
এটাও তাহলে স্কুল । স্কুল বা থটস । রিয়েল বা ভার্চুইয়াল । এরকম এক টানাপোড়েনে কিভাবে
মানুষ কয়েকদিন ধরে যাপন কে ছেড়ে দিয়ে শুধু সাহিত্যের উপরেই বাঁচে । তথাকথিতের উপরে
নতুনের উদ্যেশ্য মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় । মনের খিদে থেকে দূরে হটে যায়
ম্যাটেরিয়ালিস্ট কলেজগুলো , এমনই একদিন ভাস্বতীদি আমাকে ফোনে জানালেন তার
কবিতাগুলো পৃষ্ঠা বা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, বইখানি দেখার ইচ্ছে হলো, উনি আমাকে নতুন
কবিতা স্টলে নিয়ে গিয়ে এই বইখানি উপহার দিলেন ।
ভাবনা কলেজঃ ভাস্বতী
গোস্বামী
এই বইটি আসলে দুটি ভাষায়,
আমি বাংলায় গান গাই, প্রথমে তাই বাংলায়
চোখ মেলি, সামনের কবিতা টি “জানালা” এরকম
“জানালা উড়িয়ে দিলে / খোলা
চুল ফিরে আসে”
আলাদা একটা অনুভব । এরকম ফিলিং আমার যদিও কখনো হয়নি, কিন্তু
আমার ভাবনায় কোথাও না কোথাও খোলাচুলের একটা গোপন জায়গা আছে, কিংবা উড়তে চাওয়ার ও একটা স্পর্ধা । কিন্তু, অনেক
কিন্তু থেকে যায় গোপনগুলোর মতন, শব্দেরা দানা বাঁধে, কাগজ খোঁজে ওরা, দলবদ্ধ হয়ে
ওরা কবিতা হতে চায় ।
“ম্যারিনেট” কথাটা কিচেন থেকে আসে, দু এক বার আমিও কাঁচা
হতে টকদই নিয়ে খেলেছি ।কবিতাটা পড়ি।
“আদা রসুনের ম্যারিনেটে ঘর / খোলামেলা লুডো ” নারীর জীবনে
সংসারের সীমাবদ্ধতার কথা জানায় । নারীর মনের অঙ্গন রিং রোড হতে চায়, সে চায় অজস্র
সেডান ঘুর্ণি তুলে তার বুকের উপর দৌড়ে যাক !
তার “জিরাফ” সিরিজের কবিতাগুলি আমার আগে শোনা, এই জিরাফ
গুলো ধর্মের জিরাফ নয়, আমি হলফ করে বলতে পারি । আমার কিশোর বয়সে একবার এয়ার
ফোর্সের মিউজিয়াম দেখতে যাই, সেখানে একটা নিস্ক্রিয় বোমা দেখতে পাই, তার উপরে লেখা
ছিলো, Gift to NAWAJ SAHRIF From
RAVEENA TANDON. এই জিরাফ কবিতায় সেই কনট্যুরগুলো
আবার দেখতে পাই, মন চঞ্চল হয়ে ওঠে ।
ভাস্বতীদি ছবিটা স্বল্প স্ট্রোকে আঁকেন, ভীড়ের মধ্যে অনেক
মাথা না থাকলে খালি খালি লাগে, ব্যাকগ্রাউণ্ড ভরে দিতে হলে যেমন ফিলিং লাগে, সে
রকম । আমি জানি সিঙ্গাড়ার মধ্যে এভাবেই
হালুয়ারা আলু ভরে দেন ।
“টেরাস” কবিতাটাও সিরিজ ।
“হূলের ফাঁসে / তুলে রাখা তিন সাত ছয়/ তেলো ঘষি/ আহা
বৃষ্টিতালু / দিনের প্রথম পা ঢাকা” বা
“পায়ের ফর্সা জুড়ে বিছানা ছিল/পাখিজ্বর / বেঁটে বেঁটে
চাঁদগুলো গাছ মঙ্গল”
এই কবিতাগুলি আগে শুনিনি । কিছু এরকম কবিতা আমি প্রদীপ
চক্রবর্তীকে লিখতে দেখি, রঞ্জন দাও এরকম কবিতা অনেক আগে লিখেছেন । এই কবিতাগুলো আমার
নতুন ধরনের লেগেছে । আমার সীমিত পড়াশোনার আধারে এটুকু বলতে পারি ভাস্বতীদি “নতুন
কবিতা”র সম্মান রেখেছেন ।
এর পর আসি, “ভাবনা কলেজ”, এই নিয়ে অনেক কিছু ভাবা যায় বা
লেখা যায়, এবং অপেক্ষায় থাকা যায় আরো কিছু অভিজ্ঞতার জন্য , এরকমই হলো “ওজস
কর্নার”
“ডিমের নরমে বোলতা হাত/লাল ফুটে উঠল দোলের সবটা জুড়ে” –
লেখার ঢংটা যেন হোলির দিনগুলো কে মনে পড়ায়, মনে রং ধরায়, সমস্ত শরীর গান গেয়ে উঠতে
চায় ।
“আইটেম নাম্বার” আর একটি ছোট্ট সিরিজ, আবার তথাকথিত কবিতা
থেকে আলাদা
“আলোয়ান জড়িয়ে এলবাম ফুটছে/ফিলিপস বাল্বে কবেকার
অনুরোধ/কুয়াশা গীটার” বা
“আমি পরিযায়ী হলে/ মাঠ অন্ত;সত্তা......একটা একটা করে /
স্টেশন ছাড়ার ঠিক পরের ভাস্বতীতে”
–আইটেম নাম্বার ৪ টা আমার শ্রেষ্ট মনে হয়েছে । এগুলিতে আমি
ভাস্বতীদিকে নতুন করে চেনা যায় । অচেনা ভাস্বতীর
দিদি থেকে কবি হয়ে ওঠার নতুন প্রচেষ্টা । এখানে কবিতা শেষ হয়ে যায় না, নতুন রূপে
উপস্থিত হতে থাকে ভাষা, কাল ও অবস্থান, ভাস্বতীদির এর নতুন যাত্রায় আমি তাকে
অভিনন্দন জানাই ।আমাকে একটা বই উপহার দেবার জন্য আবার তাকে ধন্যবাদ । বইটিতে
অটোগ্রাফ করে লিখে দিলেন
“আমার প্রাবাসী বন্ধু / খোলা হাওয়ার মত পীযূষকে”
বইয়ের প্রচ্ছদখানা সিম্পলের মধ্যে শক্তিশালী স্বাক্ষর
রেখেছে, বাইন্ডিং ও ভালো, বইটি আমি সাজিয়ে রেখেছি অন্যান্য প্রিয় বইগুলোর সাথে ।
No comments:
Post a Comment