নদীতে সায়ং ভেসে যায়ঃ উমাপদ কর

পাঠকামি-৫

"আমার প্রাণের পরে চলে গেল কে"...উমাপদ কর এভাবেই দেখেন জীবন যাত্রা কে,িনি কবিতার সাথে জীবন মিলিয়ে এক চুমুকে পুরো পেগটা চড়িয়ে নিয়ে বললেন, পীযূষ "কবিতা আমার কাছে একটা জার্নি "
হোটেল ডি বেংগলে বসে কথা হচ্ছিল, আমি বল্লাম কবি হিসাবে আপনি কি ‘নতুন না কৌরব’ ? উনি বললেন জার্নিটা উনার একার এত দিন ধরে উনি একাই এই যাত্রা করছেন । একটু বোঝার চেষ্টা করলাম, তরল পদার্থটা জানি একটু একটু করে পাকস্থলীর আশেপাশে নদীর মত ঘুর্নি তৈরী করেছে,  তাই জার্নিটা বোধ হয় এবার জলপথে,  আমাকে বল্লেন "নদীতে সায়ং ভেসে যায়" এই বইটা তোমাকে আমি উপহার দিলাম শুধু কবিতা না, তিনটি কবিতাও উনি জলের ঘোরে শোনালেন, পরিচয়টাও বাড়ল আজ খুলেছি সেই বই
বইঃ নদীতে সায়ং ভেসে যায় -  উমাপদ কর
'বাঁচতে চাওয়ার নাম পরিখা / খননের অপর নাম পেখম খোলা শজারুএকটু হোচট ই খেলাম পরিখায় এত পথ হেঁটে এসে ভুলতে বসেছি কারা পথ বানিয়ে গেছে শুধু হাঁটার কথা মনে রাখি
'একটা কোথাও দাগ, একটু পদচিহ্ন' - ধুলোর গল্পটা ভালো জমিয়ে লিখেছে উমাপদ কর উমাদা লেখেন -
'ঘুম এখন ঘুমের ভিতর বুদ্ধ / শেকড় শুদ্ধ দ্রুম পাশ ফিরে শুয়ে' - আমি জানি উমাদা স্বপ্ন কে বড় ভালোবাসেন, পাঠককেও স্বপ্ন দেখান, মোড়ক খুলে ভেতর থেকে একটা মোড়ক বের করেন... আর একটা কবিতায় আটকে যাচ্ছি...
'জল পেরোলেই ডাঙা এমন তো নয়' - ভাববার বিষয়, উমাদা কি করে এসব ভাবেন? একদিন জিজ্ঞাস করলাম গম্ভীর ভাবে বল্লেন “বহুদিন ধরে লিখছি তো” ...কিন্তু কিছু কামেন্ট করার সুযোগ পেলাম না উমাদা আমাদের বয়সটা কে অনেক আগে পার করে এসেছেন,  নদীতে সায়ং ভাসিয়ে দিয়ে বহুদূর পাড়ি দেওয়ার পর এই পাক্কা মাঝীর ও মনে হঠাৎ সংশয় দরজার ওপারটায় কী ?
'জোয়ার এলো, এইতো চারুলতা ভাসিয়ে দেওয়ার/ দেদার মদ, ফুরিয়ে যাবার আগে শেষবার বলা, নিশানাথ না?' আসলে কোথায় যাব? আটকেই তো থাকি আমরা, শুধু সময় ঘুরে ফিরে আসে

'নি' কাব্যগ্রন্থ থেকে আরো কিছু ভালো কবিতা পড়েছি, এবার যাবো 'গলুই ভর্তি আমি' তে কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয় আমি বড় আনাড়ী পাঠক! এই কাব্য, এই বাংলা, এই কবিতা থেকে অনেক দূরে আছি...আমি কি নিজের থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি না ?
'গভীর রাতে পভার্টি লাইনের নীচে নেমে আসে চাঁদ / কয়েকটা মোষ-মেঘ ছিঁড়ে হাঁড়িয়া তরলে তার স্ফীতি' -এ এক অন্য জার্নির কথা আমি বুঝতে পারছি।
'বাঁশি বাজলেই আবর্জনা বেরিয়ে আসে ঘর থেকে’ -কত সহজে এই সমাজচিত্রটি ও পাঠকের মনে উঁকি মারে কি নিয়ে তিনি লেখেন না?
'সংখ্যার দুদিকেই গোলাপ পাঁপড়ি তারিখের শরীর ধেবড়ে দেওয়া শুকনো গোলাপ পাতার ক্লোরোফিল। ফিল করতে না করতেই...' -বোঝা যায়, কবি শব্দজব্দতেও মাহির একদম ভেটেরান 'গহনার খাদ কথায় মিশে যায়', আমি দেখেছি, কি করে এই পিত্তল দুনিয়ার কারবার চলছে সানি লিওনির কথাটাই বেশী করে মনে পড়ছে বেবী ডল সোনা হয়ে যাচ্ছে
এবার পড়ব 'নেত্র নয়, তিন-এ তে-তাস' - নাহতে-তাস কোন নদীর নাম নয় কিন্তু উমাপদ করের সায়ং অলরেডী মাঝ দরিয়ায় ! নদীতে সায়ং ভেসে যায় উমদা মাঝে মাঝে একাই তার সারথী, একাই তার আরোহী,  পিছুটানে কিছু স্মৃতিও খুঁজে আনেন
'হোলি লাগা বিদ্যুৎ তারে ঝোলা রঙ্গিন ব্লাউজটা কি তোমারই?'  - হয়ত মনে পড়ে সেই বিদ্যুৎবাহী সেই প্রথম প্রেমের পরশ 
'কানপাশা জোড়ার একটা বুঝি চিবুকেই ঝুলে থাকে, বিন্দু বিন্দু জলের কানপাশা' - আসলে কি সেই অলংকার? প্রেমকেই আমরা প্রেম করি...প্রেমের মধ্যে ডুবে থাকে ভালোলাগা
'নীলের আরো কাছাকাছি যাবো', - আমারো খুব নীলের কাছে যেতে ইচ্ছে করে। সেই জন্য কবিতা পড়ি, দু একটি লাইন ও লিখি। উমা দা লেখেন কবিতা
'আমাকে মডেল করে নীলছোপ সাদা ক্যানভাসে মকবুল ফিদা... -আমি জানি হোসেন সাব এতে রাগ করবেন, কিন্তু অগনিত পাঠকের মত এখানে তার নাম উল্লেখ না করায় আমিও ফিদা হয়ে যাই

বিষয়গুলো ভালো চয়ন করেন উমাদা, নিজস্বতা আছে আমারই সীমিত কবিতা জ্ঞান উমাদার এই লেখাকে সার্টিফাই করতে চাইছে না, জানি না আরো কত পড়া বাকি, উমাদার এই লেখালেখি প্রসংসার দাবী রাখে

No comments:

Post a Comment